পৃথিবীর শেষ প্রান্ত

 দ্বীপভূমি  ......'টিয়েরা-ডেল-ফুয়েগো’  

অর্থাৎ  পৃথিবীর শেষ প্রান্ত। এখানেই 

শেষ হচ্ছে পৃথিবী, রাজধানী শহরের 

নাম "উশুইয়া"।  এবার জেনে নেওয়া

যাক কোথায় ও কেমন সেই জায়গা?

টিয়েরা-ডেল-ফুয়েগো বা ‘পৃথিবীর শেষ প্রান্ত’ দ্বীপভূমির রাজধানী শহর হল উশুইয়া। এ শহরটি দ্বীপের দক্ষিণতম প্রান্তে অবস্থিত। ১৫২০ খ্রিস্টাব্দে বিখ্যাত পর্তুগিজ নাবিক ম্যাগেলান সমুদ্র অভিযানে বেরিয়ে আটলান্টিক এবং প্রশান্ত মহাসগরের সংযোগকারী একটি প্রণালীতে উপস্থিত হন। রাতে দেখতে পান দূরের দ্বীপভূমির বিভিন্ন জায়গায় আগুন জ্বালানো হয়েছে। ম্যাগেলান ধরে নিলেন দক্ষিণ দিকে এর পরে আর কিছু নেই। এ জন্য তিনি এ দ্বীপভূমির নামকরণ করেন ‘টিয়েরা-ডেল-ফুয়েগো’ অর্থাৎ পৃথিবীর শেষ প্রান্ত।

কিছুদিন পর ফিরে যান ম্যাগেলান। পরবর্তীকালে এ প্রণালীর নাম হয় ‘ম্যাগেলান প্রণালী।’ বর্তমানে এ শহরের জনসংখ্যা ৫৭ হাজার। আর আয়তন ২৩ বর্গ কিলোমিটার। এখানে জনঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে আড়াই হাজার। পাশেই রয়েছে উশুইয়া উপসাগর ও প্যাসো চিকো। এটি গিয়ে পড়েছে বিগেল চ্যানেলে। 

২৫০ মাইল দীর্ঘ এবং সাড়ে তিন মাইল চওড়া এ চ্যানেল থেকে বেরিয়েছে অনেক নদীনালা-খাল-বিল। একদিকে চিলির পুয়ের্তো অ্যালমানরা। উশুইয়া শহরের সবচেয়ে পুরনো বাড়ি নেভাল বেস। ১৯০২ থেকে ১৯১১ পর্যন্ত দীপান্তরপ্রান্ত বন্দিদের দিয়ে ‘নেভাল বেস’ বানানো হয়েছিল। সেই সময় জনবসতিহীন উশুইয়াকে জনবহুল করার জন্য আর্জেন্টিনা সরকার বিংশ শতকের প্রথম দিক থেকেই বন্দিদের এখানে নির্বাসন দেয় এবং পরে পুনর্বাসিত করে। বর্তমান অধিবাসীদের একটা বড় অংশই শান্তিপ্রাপ্ত বংশধর। উশুইয়া শহরের পুরোটাই পাহাড়ে ঘেরা। 

উশুইয়াতে রয়েছে কিছু স্কুয়া, ক্যানকুইন এবং কিছু সমুদ্রচিল বা সিগাল। ক্যানকুইনরা দেখতে অনেকটা পেঙ্গুইনদের মতোই সাদা-কালো। এদের রয়েছে লম্বাটে গলা এবং বড় বড় পাখনা। এরা একটানা হাজার হাজার মাইল উড়তে পারে। ইসলে-ডে-লস লবোসে রয়েছে সিল এবং ভোঁদড়। উশুইয়ার লাইট হাউসটি পৃথিবীর দক্ষিণতম প্রান্তের শেষ লাইট হাউস। এরপর আন্টার্কটিকার পথে আর কোনো বাতিঘর বা লাইট হাউস নেই। এখানে দু’পাশে পাহাড়ের সারি, কোথাও বরফ কোথাও বরফ ছাড়া। ইয়াগালেস উপজাতিদের স্মৃতিও জড়িয়ে আছে পৃথিবীর শেষ শহরে। ইউরোপীয়রা আসার আগে এখানে বসবাস করত ইয়াগালেস উপজাতিরা। ইউরোপীয়দের বয়ে আনা রোগ-পীড়া এবং ক্রমাগত অত্যাচারে তারা প্রায় নিশ্চিহ্নের পথে। একদিন হয়তো শুধু রয়ে যাবে কিছু স্মৃতিচিহ্ন।

উশুইয়ায় সর্বপ্রথম গড়ে ওঠা বিল্ডিং সেলোসিয়ান চার্জটি এখনও আছে। এছাড়া রয়েছে প্রথম গভর্নমেন্ট হাউস, প্রথম থানা, অ্যান্ড অব দ্য ওয়ার্ল্ড মিউজিয়াম ইত্যাদি। এখানকার অধিবাসীদের আয়ের অন্যতম উৎস ট্যুরিজম, বিশেষ করে ইকো-ট্যুরিজম। যাতায়াতের উপায় জাহাজ। ঢোকার মুখে স্বাগত জানানো হয় গরম চকোলেট দিয়ে। উশুইয়া হয়েই যেতে হয় আন্টার্কটিকার পথে।



Comments

Popular posts from this blog

আত্মসম্মান

ভালোবাসুন জীবনের ঠিক শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত