আত্মসম্মান

উফফ এতো সকালে কে ফোন করলো। একরাশ বিরক্তি নিয়ে ফোনটা হাতে নিল শ্রী। ফোনের স্কিনে রং নাম্বার দেখে একরাশ বিরক্তি নিয়ে ফোনটা তুললো শ্রী। ফোনের ওপার থেকে হ্যেলো বলা মাএ শ্রী বুঝতে পারল এ তার বহু পরিচিত কন্ঠস্বর। আজ প্রায় সাত বছর পর সে কন্ঠস্বর শুনতে হবে একবার ও ভাবেনি শ্রী। 

- হ্যালো শ্রী আমি দেবার্ঘ্য বলছি। চিনতে পেরেছে আশাকরি। একবার তোমার সাথে দেখা করতে চাই শ্রী। আমায় কি ক্ষমা করা যায় না। 

 কথাগুলো শুনে শ্রী উওর না দিয়েই ফোনটা রেখে দিল। হঠাৎই তার চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ল। 

     এখনকার শ্রী আর  সাত বছর আগের শ্রী এর মধ্যে আজ অনেক তফাৎ। 

   


            এখন সে শহরের নামকরা নৃত্যশিল্পী শ্রীলেখা ভট্টাচার্য। চারিদিকে তার নাম ডাক মানুষের মুখে মুখে।। যশ খ্যাতি তার তকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে। 

     আর  আজ থেকে ঠিক সাত বছর আগে শ্রী অত্যন্ত শান্ত সাধাসিধে এক মেয়ে। না ঠিক আধুনিকা বললে চলে না তাকে, একটু ঘরোয়া স্বভাবের মেয়ে সে ছোটো থেকেই। 

              সবেমাত্র ইউনিভার্সিটি পাশ করেছে শ্রী। নৃত্যে ভীষণ পারদর্শী। তখনই দেবার্ঘ্য এর বাড়ি থেকে বিয়ের সম্বন্ধ আসে। শ্রী এর বাবা মায়ের বেশ পছন্দ হয়ছিল দেবার্ঘ্য কে। ছেলে ভালো তার ওপর   মাল্টিন্যাশনাল কম্পানিতে কর্মরত। শ্রীয়ের ও বেশ পছন্দ হয়ছিল দেবার্ঘ্য কে। তাই মেয়ের মত পেয়ে শ্রীয়ের বাবা আর দেরি করেনি বিয়ের আয়োজনে।। 

           এক শুভ লগ্নে চার হাত এক হয়ে যায়। একরাশ স্বপ্ন নিয়ে শ্রী প্রবেশ করেছিল দেবার্ঘ্যের বাড়িতে। নতুন জীবন অনেক সুখের হবে বলেই ভেবেছিল শ্রী। 

         তার এই ভাবনা বেশিদিন স্থায়ী হল না। বিয়ের ছয়মাস পর শ্রী কে দেবার্ঘ্য জানায় এই বিয়েতে তাঁর মত ছিল না। একরকম বাড়ির প্রেসারের ফলে তাকে এই বিয়েতে রাজি হতে হয়।। সে বিয়ের আগে থেকেই এনা (তার প্রেমিকা) সাথে সম্পর্কে আছে। দেবার্ঘ্যের মায়ের এনা কে পছন্দ ছিল না তাই তাকে এক প্রকার বাধ্য হয়ে বিয়েতে বসতে হয়। এবং এখনও দেবার্ঘ্য এনা -এর সঙ্গে সম্পর্কে আছে এবং ভবিষ্যতে ও থাকবে। শ্রীকে স্ত্রী রূপে মন থেকে মেনে নেওয়া তার দ্বারা সম্ভব নয়। 

     শ্রী তার শাশুড়ি মাকে প্রশ্ন করছিল কেন তিনি তার সাথে এতবড় প্রতারণা করলেন। উত্তরে তিনি বলছিলেন

- ছেলেরা একটু ওরকম হয় এখন তোমাদের বিয়ে হয়েছে, স্বামীকে বেঁধে রাখার দায়িত্ব তোমার।। 

            শ্রীর স্বপ্নগুলো এক নিমেষে ভেঙে গেছিল উন্মাদের মতো সে কেঁদে ছিল বারবার তার মনে একটাই প্রশ্ন আসছিল " তার দোষটা কোথায় ছিল, কেন তাকে এত বড় শাস্তি পেতে হলো"। কোনও উত্তর সে খুঁজে পায়নি শ্রী। 

  বাড়ির লোকজন তাকে বোঝালো যখন তাদের বিয়ে হয়েই গেছে তখন তাকে মানিয়ে নিতে হবে। এক প্রকার বাধ্য হয়ে শ্রী চেষ্টা করছিল সবকিছু মুখবন্ধ করে সহ্য করার। কিন্তু সেটাও বেশিদিন স্থায়ী হলো না। 

     দিনে দিনে তার ওপর মানসিক অত্যাচার বেড়েই চলছিল। দেবার্ঘ্য তাকে নানান ভাবে অপমান করতে ব্যাস্ত হয়ে পড়ত ... 

 - শ্রী এর মতো ব্যাকডেটেড মেয়ের জন্য তার জীবনে কোনো স্থান নেই। তাকে নিয়ে ঠিক চলা যায় না। কেন সে পড়ে আছে তার বাড়িতে, তার কোনো যোগ্যতাই নেই কিছু করার। দুবেলা খাওয়ার জন্যই সে এখানে পড়ে আছে। তার ওপর চলতো তার প্রেমিকা এনার সাথে তুলনা

- কি নেই এনা র মধ্যে একটা পুরুষ যা চায় সব আছে। পারলে ওর মতো হয়ে দেখাও যতসব! 

দিনে দিনে অপমান গুলো শেষ করে দিচ্ছিল শ্রী কে। তার ওপর তার শাশুড়ি মা দিনে রাতে তাকে কথা শুনাতে ব্যাস্ত

- কি মে ছেলে তুমি বৌমা নিজের স্বামী কে ধরে রাখতে পারো না। দোষ তোমার মধ্যেই আছে নইলে ছেলে আমার বাইরে যেত না। 

    অপমান গুলো তার আত্মসম্মান কে দিনে দিনে আঘাত করেই চলছিল। শুধুমাত্র তাদের বিয়ে নামক এক সম্পর্কের জন্য এতকিছু মুখ বুজে সহ্য করতে হবে!! নিজের অস্তিত্ব দিনে দিনে বিলীন হয়ে পড়ছিল। 

     একদিন রাতে দেবার্ঘ্য চুড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল। সেদিন ছিল শ্রীর জীবনের কালরাত্রি।দেবার্ঘ্য ভীষণ মদ্যপান অবস্থায় শ্রী এর গায়ে হাত তুলেছিল। না আর সেদিন সহ্য করতে পারেনি শ্রী, সেই রাতে লোকে কি বলবে, কি ভাববে সমস্ত কিছু উপেক্ষা করে এক কাপড়ে বেরিয়ে আসে দেবার্ঘ্যের বাড়ি থেকে। সেখানে কোনো সন্মান নেই সেখানে আর থাকতে পারেনি শ্রী। 

     তারপর বাপের বাড়ি থেকে ডিভোর্স ফাইল করে শ্রী। খুব তাড়াতাড়ি তাদের ডিভোর্স ও হয়ে যায়। শেষ বারের মত দেবার্ঘ্যের সাথে কোর্টে দেখা হয়। সেদিন ও শ্রী মনে শুধু একটাই প্রশ্ন ছিল, 'তার কি দোষ ছিল'।              

    সে এক সময় ভেবেছিল নিজেকে শেষ করে দেবে কিন্তু করতে পারেনি, তার কানে ভেসে আসে দেবার্ঘ্যের সেই কথা 'কিছু করার ক্ষমতা নেই'। 

           না আর পেছনে ফিরে দেখেনি শ্রী নতুন ভাবে আবার হয় তার জীবনের শুভারম্ভ। নিজের নাচ নিয়ে এগিয়ে যায় সে। আর আজ সে নিজে প্রতিষ্ঠিত বিখ্যাত নৃত্যশিল্পী শ্রীলেখা ভট্টাচার্য।। 

      ভাবতে ভাবতে চোখ ভিজে গেল শ্রীর। তার বাড়ির পরিচারিকার ডাকে তার হুস ফেরে।। 

- কি এমন ভাবছ আর কাঁদছো দিদিমণি সকাল সকাল!! তোমার কফি তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও দেখি। 

বলে বেরিয়ে গেল তার পরিচারিকা। 

      কফি শেষ করে সে ফোন করে দেবার্ঘ্য কে এবং বিকাল পাশের একটা ক্যাফে তে দেখা করবে সেটা জানিয়ে দেয়। 

             বিকালে টাইম মতো শ্রী উপস্থিত হয় ক্যাফেতে। টাইমের আগেই বোধহয় দেবার্ঘ্য সেখানে উপস্থিত হয়ছিল, শ্রীকে দেখামাত্র সে উঠে আসে। শ্রী সেদিন শাড়িতে সুন্দর করে সেজে উপস্থিত হয়ছিল। 

 একটা টেবিলে দুজনে বসলো

- আমার ব্যাবহারের জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী শ্রী। তোমার প্রতি অন্যায়ের শাস্তি আমি পেয়েছি। এনা ছেড়ে গিয়েছে বহুদিন আগেই। এতদিন সাহস করে তোমার সামনে আসতে পারি নি। আজ অনেক আশা নিয়ে তোমার কাছে এসেছি প্লিজ ফিরিয়ে দিও না। আমায় ক্ষমা করে দাও শ্রী। 

 একটু হেসে শ্রী বলে উঠলো

- তোমায় অনেক ধন্যবাদ দেবার্ঘ্য। তোমার অপমান গুলো আজ আমাকে এই যায়গায় এনে দাঁড় করিয়েছে। ক্ষমা তাদের করা যায় যারা নিজের মানুষ হয়, আর তুমিতো কোনো দিন আমার ছিলে না তাই ক্ষমা করার কোনও প্রশ্ন আসে না। 

আর ভেঙে যাওয়া কোনও কিছু স্বচ্ছল ভাবে পাওয়া যায় না, সে সম্পর্ক হোক বা অন্য কিছু। নতুন করে ভাবার মতো নতুন করে বিশ্বাস করার মতো ক্ষমতা আমার নেই। মানুষ খাবার ছাড়া বেঁচে থাকতে পারে কিছুদিন কিন্তু সন্মান ছাড়া থাকা যায় না। আর আমি কোনও অপশন না। তোমার কাছে আজ যদি এনা থাকতো তাহলে তুমি কোনোদিন আমার অস্তিত্বের কথা ভাবতে না। তাই ফিরে যাওয়ার কোনও প্রশ্ন আসে না। আমি আর নিজের আত্মসম্মান বিসর্জন দিতে পারব না। 


      নিজের ব্যাগ থেকে একটি আঙটি বের করে টেবিলের উপর রাখল শ্রী

তোমার দেওয়া এই একটি মাত্র জিনিস যেটা তুমি বিন্দুমাত্র নিজের ইচ্ছে তে দাওনি, শুধুমাত্র নিয়ম রক্ষার জন্য একদিন পরিয়ে দিয়েছিলে। এই শেষ স্মৃতি টুকু আমার কাছে ছিল আর রাখতে চাই না। আজ তোমার সাথে দেখা করার এটাই একমাত্র কারণ। 

আজই আমাদের শেষ দেখা দেবার্ঘ্য। ভালো থেকো।

      

       টেবিল ছেড়ে ক্যাফের বাইরে যেতে না যেতেই একদল  মানুষের ভীড় অটোগ্রাফ-এর জন্য ঘিরে ফেলে শ্রী কে।। শ্রী ব্যাস্ত হয়ে পড়ে সেদিকে। নিজের আত্মসম্মান সাথে নিয়ে শ্রী আজ অনেক এগিয়ে সবাইকে পেছনে ফেলে।

Comments

  1. titanium arts
    TATONIC ART CUSTOMING · TATONIC ROCKING T-TATONIC ROCKING wooricasinos.info T-TATONIC poormansguidetocasinogambling.com ROCKING T-TATONIC. This unique and original 바카라 design is crafted with งานออนไลน์ the mens titanium wedding bands use of sustainable

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

সাদা অংশ না হলুদ অংশ

পৃথিবীর শেষ প্রান্ত