ইনসুলিন আবিষ্কার
হাসপাতালের একটা ওয়ার্ড, সারি সারি পেশেন্ট, সবাই অল্পবয়সী...... সবাই গভীর ঘুমে, কোমাচ্ছন্ন! চির অন্ধকারের দেশের যাত্রী তারা, কোন চিকিৎসা নেই......! বিছানার পাশে পাথরের মত বসে, ওই বাচ্চাদের বাবা-মা......! সবাই বসে আছে, তাদের সন্তানের শেষ সময়ের অপেক্ষায়। ভাবুন, একবার! বাবা-মায়ের কি নিদারুণ, করুণ মনের অবস্থা! কোন আশা নেই? কোন চিকিৎসা নেই!!!! কোন সে অসুখ???
ডায়াবেটিস। রক্তে সুগারের মাত্রা এত বেশী, এত্ত বেশী, যে রক্ত হয়ে উঠেছে বিষাক্ত! পুরো অ্যাসিড! এই অবস্থার নাম ডায়াবেটিক-কিটো-অ্যাসিডোসিস।
সাল-টা ১৯২২, টরোন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের দু-জন ডাক্তার-বিজ্ঞানী এগিয়ে এলেন, সোজা ঢুকে পড়লেন কোমায় আচ্ছন্ন বাচ্চাদের ওয়ার্ডে। হাতে তাদের ইঞ্জেকশনের সিরিঞ্জ। প্রতিটি সিরিঞ্জেই আছে এক তরল। ওষুধ না কি বিষ? হয় জীবন, না হয় মৃত্যু! ১নং বেড থেকে শুরু করলেন। প্রতিটি বাচ্চার শরীরে ঢুকিয়ে দিলেন, এই ইঞ্জেকশন। এগিয়ে চললেন, এক রাশ উৎকণ্ঠা নিয়ে। অথচ এক বুক আশাও আছে! মানব সভ্যতার চিকিৎসার ইতিহাসের এক মহা সন্ধিক্ষণ! প্রতিটা বাচ্চার শিরা খুঁজে খুঁজে সেই শিরা-তে ঢুকিয়ে দিচ্ছেন, সেই তরল। শেষ বাচ্চাটির শিরায় ইঞ্জেকশন দেওয়া শেষ করার আগেই, প্রথম বাচ্চা চোখ মেলে চাইলো! মা বলে ডেকে উঠল।তারপর দ্বিতীয় বাচ্চা চোখ মেলল! তারপর তৃতীয় বাচ্চা, চতুর্থ বাচ্চা, পঞ্চম বাচ্চা, একে একে সব বাচ্চায় চোখ মেলে চাইলো! বিছানায় উঠে বসলো সকলে....ওয়ার্ড জুড়ে তখন কান্নার ঝড়....আনন্দ - আনন্দ- আনন্দ !জীবনের আনন্দ, সন্তান ফিরে পাওয়ার আনন্দ। সিস্টার-নার্স-ডাক্তার সকলের চোখে শুধু জলের ধারা.
মানব সভ্যতার চিকিৎসা বিজ্ঞানের অন্যতম মাইলস্টোন আবিষ্কার। ইনসুলিন হরমোন। একটি ইঞ্জেকশন, সেদিনের সেই মৃত্যু উপত্যকাকে এক মুহুর্তে বদলে দিয়েছিল জীবনের উজ্জ্বল আলোতে।
ডঃ বেন্টিং এবং ডঃ বেষ্ট এই দু'জনের এই আবিষ্কার, মানব সভ্যতার ইতিহাসের এক চির শাপমুক্তি ঘটালো।কোটি কোটি ডায়াবেটিস পেশেন্ট, আজ যাদের আবিস্কারের মাহাত্মে নতুন ভাবে বেঁচে আছেন।
Comments
Post a Comment