মায়ের আত্মবলিদান

কোনো কোন সময়ে মা কাঁকড়া বিছার মৃত্যু অত্যন্ত ধীরে ধীরে  বেদনাদায়ক ভাবে ঘটে। ভাবলে অবাক লাগে যে  এই বিষধর ভয়াল কীটটি  তার সন্তানের জন্য নিজেকে আত্মবলিদান দেয়। বিষধর এই কাঁকড়া বিছার মধ্যে ও যে সন্তানের জন্য এতখানি মায়া মমতা থাকতে পারে তা না জানলে বিশ্বাস করা কঠিন।একটু একটু করে ধীরে ধীরে সন্তানের খাদ্য হিসেবে নিজেকে উৎসর্গ করে। মাতৃত্বের স্বভাবই যে সে তার সন্তানকে যে ভাবেই হোক রক্ষা করবে। এটা সমস্ত জীবজগতের মধ্যেই দেখা যায় । সমস্ত মা চায় যেন তার সন্তান এই সুজলা সুফলা পৃথিবীতে বংশপরম্পরায় চিরজীবী হয়ে বেঁচে থাকে।  এই পৃথিবীর প্রতিটি মায়ের এ এক অমোঘ কামনা।

 কাঁকড়া বিছার  সন্তানেরা  সরাসরি জন্ম নেয় মাতৃগর্ভ থেকে অর্থাৎ মানুষের মতই সন্তান প্রসব করে। অন্যান্য পতঙ্গদের মতো ডিম ফুটে বের হয় না। জন্মের সময় এদের বাহিরের কৃত্তিকাবরণী খুবই নরম থাকে।  ফলে বাইরের বিপদসঙ্কুল পরিবেশ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য তারা জন্মের পরেই মায়ের পিঠে এসে আশ্রয় নেয় । মা তার পিঠখানাকে তার সদ্যজাত সন্তানদের রক্ষা করার জন্য এগিয়ে দেয় ।  ওখানে দশ থেকে কুড়ি দিন পর্যন্ত থাকে যতদিন না পর্যন্ত তাদের বহিঃ আবরণী শক্ত হয়ে ওঠে এবং তারা বাইরের বিরুদ্ধ পরিবেশে লড়াই করার উপযুক্ত না হয়ে ওঠে। 

এবারে বাচ্চা গুলো খাদ্যের অভাবে ধীরে ধীরে তাদের মাকে পিঠ থেকে কুরে কুরে খেতে শুরু করে , মাও তার পিঠের মধ্যের অংশগুলি বাচ্চাদের শরীরের সাথে ঠেসে ধরতে থাকে যাতে তার বাচ্চা গুলোর খেতে সুবিধে হয়। বাচ্চা গুলোও অল্প অল্প বিষ inject করতে শুরু করে যাতে বিষের প্রভাবে ভেতরের অরগ্যান গুলি নরম হয়ে উঠে ও চুষে চুষে খেতে সুবিধে হয়। বিষধর কাঁকড়া বিছা এই সময় তার নড়াচড়ার গতিও শ্লথ করে দেয় যাতে তার আত্মজ সন্তানদের  তার শরীরের আভ্যন্তরীণ অংশ খেতে অসুবিধে না হয়। তিল তিল করে এই অসহ্য যন্ত্রণা সে সহ্য করতে থাকে যাতে তার সন্তানেরা ভবিষ্যতে এই পৃথিবীতে টিকে থাকার উপযুক্ত হয়ে গড়ে উঠে। 


দু একদিনের মধ্যেই মায়ের মৃত্যু ঘটে কিন্তু ঐ মায়ের মৃতদেহটি কয়েক সপ্তাহ ধরে বাচ্চা গুলোর খাদ্যের জোগান দিয়ে যায় যাতে তারা প্রাকৃতিক নির্বাচনে জয়লাভ করে।

সামান্য বিষাক্ত ভয়াল কাঁকড়া বিছাও চায় যেন তার সন্তান এই পৃথিবীতে বেঁচে বর্তে থাকে তাতে তার নিজের প্রাণ বিসর্জন দিয়েই হোক না কেন।

Comments

Popular posts from this blog

আত্মসম্মান

সাদা অংশ না হলুদ অংশ

পৃথিবীর শেষ প্রান্ত